Logo

 

সিসিবিভিও এর সেবা সমূহ

স্থানীয় সম্পদ ও সরকারী পরিসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে অভিগম্যতা

উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র ভূমির রাজশাহী জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি, দলিত ও আপামর দরিদ্র জনসাধারণ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার মত সামাজিক অনৈক্যসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চনার শিকার। কৃষিজীবী এই পরিবারগুলি বর্তমানে প্রান্তিকতার শেষ পর্যায়ে অবস্থান করছে বিধায় এরা ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর আর বর্গাচাষী হিসেবে এখনও টিকে আছে। সামাজিক কাঠামোগুলোর অবনতির সাথে সাথে সমাজে স্থানীয় সম্পদ ও লোকজ জ্ঞান ব্যবহার কমে এসেছে, কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বৃক্ষরাজি-বনভূমি ধ্বংস হয়েছে এবং লোকজ জ্ঞানের চর্চার অভাবে নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে সেগুলো হারিয়ে যচ্ছে। ফলে বিদ্যমান স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের পরিবেশগত ও অধিকারের সমস্যা সমাধানে লোকজ জ্ঞান-দক্ষতা, স্থানীয় সম্পদ ও সরকারি পরিসেবা প্রতিষ্ঠান সমূহকে চিহ্নিত করে এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে গ্রামবাসীদের জ্ঞাত করা প্রয়োজন। বিভিন্ন জ্ঞান-দক্ষতার চর্চা, স্থানীয় সম্পদ ও পরিসেবা প্রতিষ্ঠান সমূহকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া এবং এসব কিছুর মধ্যে জনগণের অভিগম্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে সিসিবিভিও উলিস্নখিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

জনসংস্কৃতি চর্চা ও উন্নয়ন কার্যক্রম

উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র ভূমির রাজশাহী জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত জনগণ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার মত সামাজিক অনৈক্যসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চনার শিকার। কৃষিজীবী এই পরিবারগুলি বর্তমানে প্রান্তিকতার শেষ পর্যায়ে অবস্থান করছে বিধায় এরা ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর আর বর্গাচাষী হিসেবে এখনও টিকে আছে। এমন এক সময় ছিল যখন এদের জমি-জামা ছিল, সুখ-শান্তি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠা এক শ্রেণীর টাউট-সাম্প্রদায়িক-ভূমিগ্রাসীর কোপানলে পড়ে এই গ্রামগুলির জনগণ তাদের ভূ-সম্পত্তি হারিয়েছে। ফলে দারিদ্র্য তাদের জীবনে এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়া এখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ও দলিত জনগোষ্ঠীর লোকেরা বিভিন্নভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং সাম্প্রদায়িক হুমকির সম্মুখিন হয়ে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে। হারাতে চলেছে তাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতির আচার, অনুষ্ঠান, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের অনেক কিছুই। আধুনিক শিক্ষা তাদের মাঝে প্রসারলাভ করেনি, সরকারী বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত, ফলে আর্থ-সামাজিক দারিদ্র্যের সাথে সাথে তাদের সাংস্কৃতিক দারিদ্রেও প্রকট হয়ে উঠেছে। আদিবাসীদের সামাজিক কাঠামোগুলোর অবনতির সাথে সাথে তাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক জীবনচারিতা বিদ্ধসত্ম হয়ে পড়েছে, কারণ সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, উৎপাদন প্রণালী, চারু কারু, ললিতকলা অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা, অবহেলা ও ভিন্ন ধর্মীয় আগ্রাসন দায়ি। এছাড়া লিখিত নথি পত্রের অভাব, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক জ্ঞান-দক্ষতার অভাব, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির গ্রামের পবিত্র স্থান (থান) এর অনুপস্থিতি এবং এর প্রতি অবহেলা ইত্যাদি। তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক জ্ঞান-দক্ষতার অনুশীলন অত্যন্ত জরুরী। অর্থাৎ সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, উৎপাদন প্রণালী, চারু, কারু ও ললিতকলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সমাজে অনুশীলন করার এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে এগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সংস্কৃতির পূনর্জীবন, সংরক্ষণ ও বিকাশের উদ্যোগ নিতে সহায়তা করার প্রয়োজনীয় অনুভূত হয়। এই লক্ষ্যে সিসিবিভিও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সংস্কৃতি চর্চা ও উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

গ্রাম ভিত্তিক খাদ্য ব্যাংক ও খাদ্য নিরাপত্তা

গ্রাম ভিত্তিক খাদ্য ব্যাংক ও খাদ্য নিরাপত্তা: বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত লোকদের মূল জীবীকা হচ্ছে কৃষি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের প্রান্তিকতা তাদের সামাজিক কাঠামোকে দূর্বল করেছে। কৃষিজীবী এই পরিবারগুলি বর্তমানে প্রান্তিকতার শেষ পর্যায়ে অবস্থান করছে বিধায় এরা ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর আর বর্গাচাষী হিসেবে টিকে আছে। সামাজিক কাঠামোগুলোর অবনতির সাথে সাথে সমাজে ভূমিহীনতা, আর্থিক অসচ্ছলতাএবং বছরের ছয় মাস কর্মহীন - কৃষিমজুর হিসাবে এই সব জনগণকে চরম খাদ্য দারিদ্র্যের সম্মুখিন হতে হয়। বর্তমানে তারা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনিশ্চয়তার সম্মুখিন হয়ে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। অবহেলিত জনগোষ্ঠীসমূহের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিসিবিভিও ২০০৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গোদাগাড়ী উপজেলার অন্তর্ভূক্ত দেওপাড়া, গোগ্রাম, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, মাটিকাটা ও রিশিকুল ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামে খাদ্য দারিদ্র দূর করবার জন্য সিসিবিভিও গ্রাম ভিত্তিক খাদ্য ব্যাংক ও স্থিতিশীল খাদ্য নিরাপত্তা সেবা গড়ে তুলেছে। এই সেবার আওতায় সকল পরিবারের গ্রাম ভিত্তিক খাদ্য ব্যাংকে নিয়মিত মুষ্টি চাউল ও মৌসুমী ফসল সঞ্চয়সহ খাদ্য সহায়তা লেনদেন করে এবং অতিরিক্ত খাদ্য তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করে সামাজিক তহবিল গড়ে তুলছে। খাদ্য সংকটের অপদকালীন সময়ে খাদ্য, চিকিৎসা,শিক্ষা, কৃষি চাষাবাদ, ঘর মেরামত ও অন্যান্য পরিবারিক প্রয়োজন মেটাতে তারা সক্ষম হয়েছে। এখন তারা স্থানীয় মহাজন, ধনী কৃষক ও জোতদারদের নিটক চড়া সুদে দাদন গ্রহণ করে না।

সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ

বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমিতে অবস্থিত রাজশাহী জেলাধীন গোদাগাড়ী উপজেলার সংখ্যাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত জনগোষ্ঠীর মানুষ খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক দারিদ্রের শিকার। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম এবং মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়। দরিদ্র্য এই পরিবারগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রান্তিকতা রোধ ও আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার অর্জন, সংরক্ষণ এবং জীবনমানের স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে সিসিবিভিও গোদাগাড়ী উপজেলাধীন উল্লেখিত জনগোষ্ঠীর গ্রামসমূহে রক্ষাগোলা সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ করেছে। কার্যক্রমটি বাস্তবায়নকালে উরাঁও, সান্তাল, রাজুয়াড়, পাহাড়িয়া, শিং,মুন্ডা, মাহালি, রাই ও হাজরা ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। জনগণের নেতৃত্ব ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত এই সকল সামাজিক সংগঠনের উপর, সংগঠনের সম্পদের উপর এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনমালিকানা দৃশ্যমান। সংগঠনভূক্ত জনগণের সামর্থ্য ও ইচ্ছা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে খাদ্য,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাতটি কমিটি বিদ্যমান: ১.সাধারণ কমিটি, ২.পরিচালনা কমিটি, ৩.হিসাব ও নিরাপত্তা উপকমিটি, ৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উপকমিটি, ৫.নারী উন্নয়ন উপকমিটি, ৬.সাংস্কৃতিক উপকমিটি এবং ৭. যুব উপকমিটি

 

NGO সমূহ